সিআইডি সূত্রে জানা যায় এ ছাড়া সন্দেহভাজন ৩০ জনকে রেড নোটিশভুক্ত করতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে- যাতে তারা বিশ্বের কোথাও পালিয়ে যেতে না পারেন; এমনকি দ্রুত আটক করে যে কোনো সময় আইনের আওতায় নেওয়া যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ইস্যুতে আজ সোমবার থেকে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় ইন্টারপোলের তিন দিনের সম্মেলন শুরু হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রসহ ১১টি দেশ অংশ নেবে। সেখানে অর্থ চুরির ইস্যুতে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ হেল বাকী বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট দেশকে চিঠি দেওয়া হয়। সন্দেহভাজনদের রেড নোটিশধারী করতে ইন্টারপোলে প্রস্তাব দেওয়া হবে।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অর্থ চুরির ঘটনার তদন্তে বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা চায়। এরই মধ্যে ইন্টারপোল ও এফবি আই তদন্ত শুরু করেছে। বিশেষ করে যেসব দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার আলামত রয়েছে, তাদের একত্রিত করার মধ্য দিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে চায় সিআইডি। সংশ্লিষ্ট দেশের সহায়তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- জাপানের সাসাকিম তাকাশি, জয়দেবা, আরসিবিসির জুপিটার শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতো, এনজেলা তেরেস, মাইকেল ফ্রান্সিসকো ক্রুজ, জেসি ক্রিস্টোফার লাগোরাস, আলফ্রেড ভারগারা, এনরিকো তায়েদ্রো ভাসকুয়েজ, কিম ওং, সøুইড বাতিস্তা, ফিলিপাইনের ব্যবসায়ী উইলিয়াম গো সো, শ্রীলংকার এনজিও শালিকা ফাউন্ডেশনের গামাজ শালিকা পেরেরা, সানজেবা টিসা বান্দরা, শিরানি ধাম্মিকা ফার্নান্দো, ডন প্রসাদ রোহিতা, নিশান্থা নালাকা, ওয়ালাকুরুয়ারাচ্চি প্রমুখ। এ ছাড়া শালিকা ফাউন্ডেশন ও আরসিবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়া হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদেরকে এ বিষয়ে কোনো চিঠি দেয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, চারটি গ্র“পে বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি করা হয়। তারা হলো- হ্যাকার, মানিলন্ডার, নেগোসেয়িটর ও ‘ইনসাইডার’।
সিআইডি বলছে, ইনসাইডার হলো তারাই- যারা বাংলাদেশের ভেতরে বসে পরিকল্পিতভাবে অথবা তাদের গাফিলতির কারণে সহজে সার্ভারে প্রবেশ করার সুযোগ দিয়েছে। এরই মধ্যে সিআইডি তিনটি গ্র“পে ভাগ হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আরও অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
একটি সূত্র বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ কোন জায়গায় রয়েছে, সেটা নির্ণয় করা তদন্তের মূল লক্ষ্য নয়। মূলত কার কার গাফিলতির কারণে জালিয়াতরা অর্থ চুরি করেছে, সেটা প্রমাণ করাই মূল লক্ষ্য।
রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনার তদন্ত করেছে দেশের পাঁচটি সংস্থা। সিআইডি ছাড়াও এই দলে আছে পুলিশ সদর দফতর, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবি আই), ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সমন্বিত টিম।
অর্থ চুরির ঘটনায় মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলাটির মূল তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান।
